[ অনলাইন ] 04/07/2025 |
 |
|
|
ঋণের ৮৩ শতাংশই খেলাপি ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের
|
|
|
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) দিন দিন আরও সংকটে পড়তে চলেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ এতটাই বেড়ে গেছে যে অনেক প্রতিষ্ঠান এখন দেউলিয়ার মতো অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৩১ শতাংশই খেলাপি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এদের গড় খেলাপির হার ৮৩ শতাংশের ওপরে।
এই খাতে মাত্র তিন মাস আগে বা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। আর এক বছর আগে ছিল ২৩ হাজার ৮৮৯ কোটি। অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি বেড়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা আর এক বছরে বেড়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের দেওয়া ২২ হাজার ১২৭ কোটি টাকার বিপরীতে লোকসান করেছে ২৩ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া তাদের মূলধন ঘাটতি রয়েছে ১৯ হাজার ২১৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এই ২০টি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে ১ বা ২টি নতুন প্রতিষ্ঠান করা হবে। এরই মধ্যে আইন অনুযায়ী তাদের লাইসেন্স বাতিলের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে পিপলস লিজিং, বিআইএফসি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, সিভিসি ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, হজ ফাইন্যান্স, ফনিক্স ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, বে লিজিং, উত্তরা ফাইন্যান্স এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, এসব প্রতিষ্ঠান এনবিএফআই খাতের জন্য এখন বোঝা হয়ে গেছে। এরা নিজেদের সমস্যার পাশাপাশি অন্য ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোকেও টেনে নিচে নামিয়ে আনছে। তবে সব প্রতিষ্ঠান যে খারাপ, তা নয়। অন্তত ১৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে চলছে। তাদের খেলাপি মাত্র ৮ শতাংশের মতো। গত বছর তারা প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে এবং মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান বহু আগেই দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন একীভূতকরণ ছাড়া গতি নেই। তবে এই উদ্যোগ যেন কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, সেটাই সবচেয়ে জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও দায়ের হিসাব দেখা হবে। যাদের অবস্থা সন্তোষজনক নয়, তাদের লাইসেন্স চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এসব প্রতিষ্ঠান কঠোর নজরদারিতে রেখেছি। যেসব প্রতিষ্ঠান আর চলতে পারছে না, তাদের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসবে। আমানতকারীদের স্বার্থ যাতে কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন না হয়, সেটি নিশ্চিত করেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
খেলাপি ঋণ, লোকসান, মূলধন ঘাটতি আর আমানত ফেরত দিতে না পারার কারণে এনবিএফআই খাত এখন বড় এক ঝুঁকিতে। সময়মতো কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সংকট আরও গভীর হবে, এমনটাই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। |
|