[ অনলাইন ] 15/07/2025
| |
|
এসবিএসি ব্যাংকে গ্রাহকের আমানত সুরক্ষিত
|
|
মো. রবিউল ইসলাম : ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) |
সাক্ষাৎকার: চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ‘সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এসবিএসি)’। এরই মধ্যে এক যুগ অতিক্রম করেছে। দেশের আর্থিক খাতে চলমান সংকটেও ব্যাংকটির আর্থিক ভিত অত্যন্ত মজবুত। এ সময়ে ব্যাংকের সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে মূলধন, যা ঋণের ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মানদ-ে পর্যাপ্ত। অন্যান্য আর্থিক সূচকেও ধারাবাহিক অগ্রগতি রয়েছে। এসবিএসির বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা এবং ব্যাংক খাত নিয়ে সম্প্রতি আমাদের সময়ের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. রবিউল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জিয়াদুল ইসলাম।
আমাদের সময় : দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংক খাতের ভূমিকা কী?
রবিউল ইসলাম : দেশের বিনিয়োগের অনেকাংশই ব্যাংক খাতনির্ভর। সেজন্য ব্যাংক খাতকে অর্থনীতির হৃৎপি- বলা হয়। ব্যাংকগুলো মূলত সঞ্চয় আহরণ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবাহ সচল রাখে। ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ সঞ্চয় এবং ঋণ গ্রহণের সুযোগ পায়, যা উৎপাদন, বাণিজ্য ও শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করে। ব্যাংক খাত সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন এবং মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করে। কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়ে অর্থনৈতিক সমতা বজায়ে ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া রেমিট্যান্স গ্রহণ ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গঠনে সহায়তা করে। বর্তমানে ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়নে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে সক্রিয় করছে। তবে খেলাপি ঋণ, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম এ খাতের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তারপরও দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ব্যাংক খাতের অবদান অনস্বীকার্য।
আমাদের সময় : এসবিএসি ব্যাংক কীভাবে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে?
রবিউল ইসলাম : এসবিএসি একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। সারাদেশে ৯০টি শাখা, ৩২টি উপশাখা এবং শতাধিক এটিএম বুথ ও এজেন্ট আউটলেটের সমন্বয়ে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছে। একটি ব্যাংকের প্রধান দায়িত্ব, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আমানত একত্রিত করে পরিকল্পিত বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা। এসবিএসিও জনগণের নিকট থেকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে অর্থ সংগ্রহ করে বিনিয়োগকে বেগবান করছে। আমরা বৃহৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধি মোতাবেক নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিনা জামানতে ঋণ নিশ্চিত করেছি। এভাবে উৎপাদনশীল খাতে বেশি ঋণ প্রদান করে এসবিএসি প্রকারান্তরে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ অবদান রাখছে। একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ভূমিকা পালন করছে।
আমাদের সময় : আপনার ব্যাংকের আর্থিক সূচকে অগ্রগতি কেমন?
রবিউল ইসলাম : কোনো প্রতিষ্ঠানের ভালো করতে হলে তার অ্যাসেট কোয়ালিটি (গুণমানসম্পন্ন সম্পদ) ভালো থাকতে হবে। এসবিএসি ব্যাংকের আর্থিক সূচকসমূহ পর্যালোচনা করলে একটা বিষয় পরিষ্কার হবে, এখানকার সূচকগুলোতে টেকসই অগ্রগতি হয়েছে, যা এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে ব্যাংকটির বড় সাফল্য হিসেবে দেখা যায়। পুরো ব্যাংকিং খাতে যখন ডলার সংকট চলছিল তখনও আমরা গ্রাহকদের সাধ্যমতো আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে সহযোগিতা করেছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধি মোতাবেক তারল্য সংরক্ষণেও আমরা কখনও ব্যর্থ হইনি। অর্থাৎ, আর্থিক সূচকসমূহের ধারাবাহিক উন্নতি অব্যাহত থাকায় গ্রাহকের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেই টেকসই ব্যাংকিং করেছে এসবিএসি। এতে ব্যাংকটির আমানত বর্তমানে ১০ হাজার কোটি এবং ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটের মধ্যেও এসবিএসি ব্যাংক গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক অর্থ জোগান দিতে সক্ষম হয়েছে। আর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ আন্তর্জাতিক মানদ-ে উপনীত রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
আমাদের সময় : ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ দুই-তিনগুণ বেড়ে গেছে। আপনার ব্যাংকের পরিস্থিতি কী এবং উত্তরণে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন?
রবিউল ইসলাম : ব্যাংকিং খাত একটি দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই খাত যত সুদৃঢ় ও সুশৃঙ্খল থাকবে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ততই স্থিতিশীল হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশে ব্যাংকিং খাত বর্তমানে যে সমস্যার সম্মুখীন, তার অন্যতম প্রধান কারণ, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি। দীর্ঘদিন যাবত প্রকৃত খেলাপি ঋণের চিত্র ব্যাংকগুলোর আর্থিক বিবরণীতে ওঠে আসেনি। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্যান্য খাতের ন্যায় ব্যাংকিং খাতেও ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে এ খাতের আসল চিত্র বেরিয়ে আসা শুরু করেছে এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়েছে।
ব্যাংকিং খাতের ন্যায় এসবিএসি ব্যাংকেরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী। তবে তা কোনো অবস্থাতেই উদ্বেগজনক নয়। যতটুকু বেড়েছে, তা সহনশীল। আমরা ঋণ আদায় ব্যবস্থা জোরদারে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ঢেলে সাজিয়েছি। ঋণ মনিটরিং সেল নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করি। এ ছাড়া শীর্ষ নির্বাহীদের ব্যাংকের শাখা পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে, যারা নিয়মিতভাবে ঋণের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করে দিচ্ছে। আমাদের সুবিধা হচ্ছে, অধিকাংশ ঋণই পর্যাপ্ত জামানত দ্বারা আচ্ছাদিত। তাই ঋণ আদায়ে আদালতের দারস্থ হলেই গ্রাহক বিকল্প নিষ্পত্তিতে আগ্রহী হচ্ছে। একই সঙ্গে একক খাতভিত্তিক পুঞ্জীভূত নয়, এমন খাতে ভালো গ্রাহকদের ছোট ছোট ঋণ প্রদানের বিষয়টিকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে। পাশাপাশি নিয়মিত হিসাবগুলোকে কঠোর পর্যবেক্ষণের আওতায় এনেছি। এসব পদক্ষেপে খেলাপি ঋণ একটি সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আমি মনে করি।
আমাদের সময় : ব্যাংকিং খাত সংস্কারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপগুলোকে কীভাবে দেখছেন?
রবিউল ইসলাম : একটা সময়ে এমন ছিল, কোনো একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হতো। যেমন- খেলাপি ঋণ এত শতাংশের বেশি হবে না বা সুদহার নয়-ছয়ের মধ্যে থাকতে হবে ইত্যাদি। এটা এমন ছিল যে, হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটার মতো। এতে পরিস্থিতি যা হওয়ার তাই হয়েছে। তবে এখন আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কারমূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। আধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের নীতির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সূচকে ব্যাপক নেতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হলেও অদূর ভবিষ্যতে শক্ত ভিত গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ব্যাংকগুলোর সম্পদ মূল্যায়ন, পরিদর্শন কাঠামো, আর্থিক চিত্র উপস্থাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এতে সাময়িকভাবে কিছুটা চাপ অনুভূত হলেও আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বিকল্প উপায় ছিল না। আশা করছি, ব্যাংক খাত ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াবে।
আমাদের সময় : আপনার ব্যাংকের আর্থিক সূচকে স্থিতিশীলতার কারণ কী?
রবিউল ইসলাম : এসবিএসির আমানত বৃদ্ধি সবসময় ইতিবাচক ধারায় চলেছে। আমানত প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ঋণ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা সতর্কতার সঙ্গে এগিয়েছি। যাতে করে ঋণ-আমানতের হার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে থাকে। আমরা বরাবরই আগ্রাসী ব্যাংকিং পরিহার করেছি। চেষ্টা করেছি, ব্যাংকের সব আর্থিক সূচকের প্রবৃদ্ধি যেন টেকসই হয়। আমরা আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ, শাখা দ্রুত বৃদ্ধির প্রবণতার পরিবর্তে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে হেঁটেছি, যার সুফল ভোগও করছি। আমাদের পরিচালনা পর্ষদও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। তারা কখনও উচ্চ মুনাফা বা শাখা বৃদ্ধির চাপ দেয়নি। |
|