[ Online ] 16/07/2025
| |
|
রিটার্ন ছাড়া মিলবে ক্রেডিট কার্ড, বাড়বে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি
|
|
|
চলতি অর্থবছর থেকে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণসহ ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ সেবার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়েছে সরকার। ফলে দেশের লাখো নাগরিকের জন্য ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা গ্রহণ এখন আরও সহজ এবং সহজলভ্য হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাধ্যবাধকতা উঠে যাওয়ায় বাড়বে কার্ড ব্যবহার
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, এ উদ্যোগ ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে সহায়ক হবে। সম্প্রতি ঢাকায় ইস্টার্ন ব্যাংক ও মাস্টারকার্ডের যৌথ উদ্যোগে বায়োমেট্রিক মেটাল কার্ড উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, ‘রিটার্ন বা কর ফাইল সংক্রান্ত কিছু অপ্রয়োজনীয় শর্ত এনবিআরের সঙ্গে সমন্বয় করে তুলে দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকিং সেবায় প্রবেশাধিকার বাড়বে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, এখন কোনো ব্যাংক যদি রিটার্ন জমার শর্তে কার্ড দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্রেডিট কার্ড পেতে এখন যা লাগবে
রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও ক্রেডিট কার্ড পেতে এখনো কিছু প্রাথমিক যোগ্যতা ও কাগজপত্র লাগবে। যার মধ্যে টিআইএন নম্বর আবশ্যক। এছাড়া চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বেতন ৩০ হাজার টাকা, ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বছরে ১০ লাখ টাকার লেনদেন এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও নির্ভরশীলতাভিত্তিক কার্ডের সুযোগ রয়েছে।
ক্রেডিট কার্ড পেতে আবেদনপত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, দুই কপি ছবি, ঠিকানার প্রমাণ (বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিল), পুরোনো ব্যাংক স্টেটমেন্ট, নমিনি তথ্য ও ব্যাংক রেফারেন্স প্রয়োজন হবে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম ও খরচ
ক্রেডিট কার্ডে খরচ মানে এখন খরচ করে পরে ফেরত দেওয়া। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে চড়া সুদ দিতে হয়। কার্ড গ্রহণের পর পিন নম্বর সেট করতে হয় এবং বিল পরিশোধের তারিখ মাথায় রাখা জরুরি। প্রতি কার্ডে সাধারণত এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বার্ষিক মাশুল কাটা হয়। তবে উচ্চ লেনদেনকারীদের ক্ষেত্রে তা মওকুফ হতে পারে।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড সেবা চালু করে তৎকালীন এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক (বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড)। বর্তমানে ৪০টির বেশি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। ভিসা ও মাস্টারকার্ড ছাড়াও রয়েছে- সিটি ব্যাংক: এমেক্স, প্রাইম ব্যাংক: জেবিসি, ইবিএল: ডিনার্স ক্লাব, ডাচ্-বাংলা: নেক্সাস পে এবং এমটিবি: ইউনিয়ন পে।
রিটার্ন ছাড়া নেওয়া যাবে যেসব সেবা
চলতি অর্থবছর থেকে নিচের ১৩টি সেবার ক্ষেত্রে রিটার্ন জমার প্রমাণ লাগবে না। এগুলো হলো- ১০ লাখ টাকার নিচে সঞ্চয়পত্র কেনা, ১০ লাখ টাকার নিচে মেয়াদি আমানত (এফডিআর), যেকোনো ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়ন, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স, সমবায় সমিতির নিবন্ধন, সাধারণ বিমার সার্ভেয়ারের লাইসেন্স, পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণ (ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী ইত্যাদি), ৫ লাখ টাকার বেশি পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব, এমপিওভুক্ত দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদে অর্থ গ্রহণ, মোবাইল ব্যাংকিং বা ই-ট্রান্সফারে কমিশন আয়, স্ট্যাম্প ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে তালিকাভুক্তি, ত্রিচক্র যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা পরিবর্তন এবং ই-কমার্স ব্যবসার লাইসেন্স গ্রহণ।
সুবিধাভোগীদের জন্য আশার আলো
এ নীতিগত পরিবর্তন দেশের বড় জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সহজ করবে, বাড়াবে ডিজিটাল লেনদেন এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নতুন গ্রাহকের প্রবেশাধিকারে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
সিটি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অরূপ হায়দার বলেন, চলতি অর্থবছর থেকে ক্রেডিট কার্ডসহ বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি সেবা গ্রহণে আয়কর রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে আমাদের গ্রাহকদের এ বিষয়ে অবহিত করেছি।
তিনি বলেন, শুধু সিটি ব্যাংক নয়, অন্য যেকোনো ব্যাংকের গ্রাহকও এখন রিটার্ন জমা ছাড়াই ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে আবেদনকারীর টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) থাকতে হবে। এ উদ্যোগের ফলে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ এবং ব্যবহারের প্রক্রিয়া আরও সহজ ও গ্রাহকবান্ধব হয়েছে।
‘আমরা বিশ্বাস করি, ব্যাংক হিসাবধারীরা এখন আরও বড় পরিসরে এ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন’—যোগ করেন তিনি। |
|