Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
বাংলাদেশে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে উন্নত রাষ্ট্র সমূহের সহযোগিতার বিকল্প নেই [ অনলাইন ] 25/04/2024
বাংলাদেশে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে উন্নত রাষ্ট্র সমূহের সহযোগিতার বিকল্প নেই
সাম্প্রতিককালে গণমাধ্যমে একটি রিপোর্ট এসেছে সুইস ব্যাংক থেকে এক বছরে দশ হাজার কোটি টাকা আমানত সরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশীরা। এই সুইস ব্যাংককে বলা হয়ে থাকে দুর্নীতির এবং গোপন অর্থ রাখার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম, তাই সুইস ব্যাংকের কুখ্যাতি বা সুখ্যাতি বিশ্বজুড়ে। জেনে রাখা ভালো, সুইস ব্যাংক একক কোনো ব্যাংক নয়, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোকেই সুইস ব্যাংক বলা হয়। সুইস ব্যাংকগুলোর রমরমা ব্যবসার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে এর গোপনীয়তা, তারা মনে করে গোপনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে সুইস ব্যাংকে বড় ধাক্কাটি আসে বারাক ওবামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেই নতুন একটি আইন পাস করেন। এর নাম ‘ফরেন অ্যাকাউন্ট ট্যাক্স কমপ্লাইন্স অ্যাক্ট (এফএটিসিএ)’। এই আইন অনুযায়ী, সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে তাদের দেশের নাগরিকদের অর্থ রাখার তথ্য দিতে হবে। ওবামার এই আইন অন্যদের জন্যও দুয়ার খুলে দেয়। ২০১৪ সালে জি–২০ দেশগুলো তথ্য আদান–প্রদানের একটি অভিন্ন প্রক্রিয়া বা ‘কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড’ নামে একটি কাঠামো গড়ে তোলে। এখন পর্যন্ত ১২১টি দেশ এই কাঠামোর আওতায় চুক্তি করেছে। ফলে তারা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের কাছ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য পাচ্ছে।

ইদানীং কানাডার বেগম পাড়া একটি আলোচিত শব্দ, বেগমপুরা শব্দ থেকে বেগমপাড়া। স্বামীদের অনুপস্থিতিতে স্ত্রীদের নিঃসঙ্গ জীবন এবং কঠিন জীবন সংগ্রাম নিয়ে ভারতীয় পরিচালক রশ্মি লাম্বা তৈরি করেছিলেন ডকুমেন্টারি ফিল্ম নাম ‘বেগমপুরা: দ্য ওয়াইভস কলোনি। কিন্তু বাংলাদেশের অনেকেই এই ‘বেগমপাড়া কথাটি ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী–আমলা–রাজনীতিবিদদের কানাডায় পাড়ি জমিয়ে সেখানে দ্বিতীয় নিবাস স্থাপনের প্রতি ইঙ্গিত করে। বলা হয় বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া আমলা, রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকসহ অর্থ লগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করে ব্যবসায়ীগণ যে টাকা পাচার করেছে সে টাকায় সৃষ্টি হয়েছে ‘বেগমপাড়া’।

বিনিয়োগ অভিবাসন সংক্রান্ত ডাটাবেজ আইএমআই ডাটা সেন্টার নিয়মিতভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ কোটায় আবেদনকারীদের তথ্য সংগ্রহ ও তা প্রকাশ করছে। তাতে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উন্নত জীবনের খোঁজে স্থায়ীভাবে অভিবাসী হচ্ছেন বাংলাদেশীরা। বিনিয়োগকারী হিসেবে অভিবাসন গ্রহণ করেছে অনেক বাংলাদেশী। অনেকেই এখন সেকেন্ড হোম বা পাসপোর্টের পেছনেও বিপুল অর্থ ব্যয় করছেন, বিনিয়োগ কোটার আওতায় দেশগুলোয় দীর্ঘমেয়াদে বসবাসের অনুমোদন নিচ্ছে তারা। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর আবেদন করছেন নাগরিকত্ব বা স্থায়ীভাবে বসবাসের (পিআর) সুযোগের জন্য। অর্থ ও সম্পদ পাচারের দুরভিসন্ধিসহ নানা কারণে আইনের নাগাল এড়ানোর তাগিদ থেকেও ঘটছে অনেক স্থায়ী অভিবাসনের ঘটনা। তবে বাংলাদেশ থেকে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে বৈধভাবে বিনিয়োগের সুযোগ নেই। বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি বা নাগরিক অন্য দেশে নির্দিষ্ট অংকের বেশি বিনিয়োগ করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনে তাকে এত বেশি টাকা দেশের বাইরে নিতে দেয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং যারা এভাবে ভিসার অধিকারী হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই অবৈধ। বৈধ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে বছরে ১২ হাজার ডলার দেশের বাইরে নেয়া যায়। যদিও সরকার সম্প্রতি একটি বিশেষ সুবিধা দিয়েছে, সেটি হলো ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো কতগুলো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে, তবে অভিবাসন সুযোগের সাথে সেটি প্রযোজ্য নয়। কাজেই বিনিয়োগকারী কোটায় ভিসা পেতে যারা দেশের বাইরে টাকা নিচ্ছে, তারা অবৈধভাবেই নিচ্ছে। এ টাকাটা মূলত দুর্নীতির টাকা, পাচারের এই অবৈধ অর্থের প্রকৃত ব্যাপ্তির এটি একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ মাত্র। কারণ এ ধরনের ব্যক্তিরা ভিসা পাওয়ার জন্য যে অর্থ নিচ্ছে, তার আগেই আরো অনেক টাকা তারা দেশের বাইরে নিয়ে গেছে বাড়ি কেনার জন্য। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নেয়ার জন্য যে ভিসা তারা পায়, এর বাইরেও আরো অর্থ পরে তাদের নিতে হয় সেখানে থাকা ও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য এবং সেটিও কিন্তু অবৈধ প্রক্রিয়ায় পাচার করে।

অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক ৪টি সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জি.এফ.আই)সুইস ব্যাংক, ইউ.এন.ডিপি ও যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আইসিআইজের পানামা ও প্যারাডাইস পেপারে পৃথিবী বিভিন্ন দেশের সাথে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের নামও উঠে এসেছে। তাদের তথ্য মতে বিশ্বে যে পরিমান অর্থ পাচার হয় তার ২৪% উন্নয়নশীল দেশ থেকে। সংস্থাগুলোর মতে বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয় তার অধিকাংশ যায় উন্নত ৩৬টি দেশে তার মধ্যে ১০টি দেশকে চিহ্নিত করেছে বিএফআইইউ ও দুদক। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুর, কানাডা, মালেয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজার ল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, হংকং ও থাইল্যান্ড। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে বলতে হয় এই উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারে উন্নত রাষ্ট্র সমূহ অনেকাংশে দায়ী। সমীক্ষা ও পরিসংখ্যানে যতদূর জানা যায় এই দুর্নীতির থেকে আয়কৃত সকল অর্থ তারা ঐ সমস্ত উন্নত রাষ্ট্রেই বিনিয়োগ করে। কিন্তু হঠাৎ করে অন্য একটি দেশের নাগরিক কী করে তার দেশে এত অর্থ বিনিয়োগ করলো তার উৎস কী, তারা সেটা যাচাই করে না। ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের দুর্নীতিবাজ মানুষগুলো আরো দুর্নীতি করতে উদ্বুদ্ধ হয়। প্রকৃত অর্থে উন্নত রাষ্ট্র সমূহ যারা উন্নয়নশীল বা অনুন্নত রাষ্ট্র সমূহকে দুর্নীতি কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে প্রকারান্তরে দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতা করছে।

তাই পৃথিবীর স্বল্প উন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে দুর্নীতি কমাতে হলে উন্নত রাষ্ট্রে অভিবাসিদের বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে কঠোর আইন তৈরী ও প্রয়োগ করতে হবে। অবশ্যই প্রতিটি রাষ্ট্র তার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশী বিনিয়োগ চায়। তবে সেই বিনিয়োগকারীর অর্থের উৎস অবশ্যই তার দেশে বৈধ উপায়ে আয় হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে এবং শুধুমাত্র বৈধ উপায়ে আয়কৃত অর্থ অভিবাসীরা সেই দেশে বিনিয়োগ করতে পারবে। যদি এই বিষয়গুলো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা যায় তাহলে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আয় এবং অর্থ পাচার অনেকাংশে রোধ হবে। এবং সেক্ষেত্রে যে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়েছে তাদের পরিপূর্ণ সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। বাংলাদেশ তথা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অবৈধ অর্থ আয় এবং অর্থ পাচার রোধে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক নিরাপত্তা, বিনিয়োগ ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ, মান সম্পন্ন পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সেটি যদি নিশ্চিত করা যেতো তাহলে দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা বৃদ্ধি পেতো এবং সরকারের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমার পাশাপাশি দেশে অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি পেতো।

লেখক: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির ১০ অভিযোগ, ৯ সদস্যের অনাস্থা
• সরকারি চাল আত্মসাৎ, ডিলারের বিরুদ্ধে মামলা
• এমসিসি তহবিলের অর্থ গায়েব, তদন্ত শুরু
• সৌদি আরবে সাতক্ষীরার নারীকে ‘যৌনদাসীর’ মতো ব্যবহার, হোয়াটসঅ্যাপে বাঁচার আকুতি
• অর্ধশত ক্যাসিনো কুশীলব হাওয়া
• লোভনীয় সিরামিক্স বিজ্ঞাপনে রমরমা অনলাইন প্রতারণা
• নারী ম্যাজিস্ট্রেট ও সেনা অফিসার পরিচয়ে প্রতারণা
• জালিয়াতি ধরা পড়ার পরও বুক ফুলিয়ে ঘুরছেন ওসমান
• রংপুরে ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি
• ভুয়া নিয়োগপত্রে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন শিবলু, অতঃপর...
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved