[ পাতা ১ ] 26/04/2024 |
|
|
|
শেয়ারবাজারে হাহাকার |
|
|
কোনোভাবেই থামছে না শেয়ারবাজারের দরপতন। ফ্লোর প্রাইস তোলার পর থেকে থেমে থেমে নিয়মিত পতন হচ্ছে সূচকের। ধারাবাহিক দরপতনে গত ৩ মাসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূলধন কমেছে ৮৮ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। এ সময় বাজারের ৮৩ শতাংশ কম্পানি ও ফান্ডের দর কমেছে। পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শুরু হয়েছে হাহাকার।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সার্বিক অর্থনৈতিক সংকট, ব্যাংক একীভূতকরণ, সুদের হার বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় শেয়ারবাজারে নিয়মিত দরপতন হচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট প্রকট হয়েছে। ফলে নতুন বিনিয়োগও আসছে না।
তাঁরা বলছেন, শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক দরপতন ঠেকাতে এখনই সরকারের পক্ষ থেকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি আগামী বাজেটেও শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী, স্টক এক্সচেঞ্জ ও স্টেকহোল্ডারদের জন্য নীতি সহায়তা দেওয়া উচিত।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক নানা সংকটে শেয়ারবাজারে দরপতনের শঙ্কায় ওই বছরের ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর পর থেকে মন্দা নেমে আসে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর লেনদেনে। দরপতনের সুযোগ না থাকায় ফ্লোর প্রাইসেই আটকে যায় বেশির ভাগ কম্পানি। পরবর্তী সময়ে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও স্টেকহোল্ডারদের চাপে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি বাদে অন্য কম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি, যা ২১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এরপর প্রথম কয়েক কার্যদিবসে সূচক সামান্য বাড়লেও তার পরই শুরু হয় দরপতন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২১ জানুয়ারি ফ্লোর প্রাইস ওঠার পর গতকাল ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ডিএসইতে ৬২ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ কার্যদিবসে দরপতন হয়েছে। প্রায় ৬৩ শতাংশ কার্যদিবসে দরপতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৮৮ হাজার ৩৪৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ১৮ জানুয়ারি ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ৮৭ হাজার ৯০৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৫৬১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
গত ২১ জানুয়ারির শেয়ার ও ফান্ডের প্রারম্ভিক দর এবং গতকাল ২৫ এপ্রিলের সর্বশেষ দরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফ্লোর প্রাইস তোলার পর এ পর্যন্ত বাজারে প্রায় ৮৩.০৯ শতাংশ বা ৩৪৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কমেছে। এ সময়ে দর বেড়েছে ৫০টি কম্পানির আর দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টি কম্পানির শেয়ারের।
দর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দরপতনের শীর্ষে আছে আর্থিক খাতের জিএসপি ফাইন্যান্স। তিন মাসের ব্যবধানে কম্পানিটির শেয়ারের দর কমেছে ৬০.০৭ শতাংশ বা ১৬.৪ টাকা। অর্থাৎ কম্পানিটিতে কোনো বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ থাকলে তাঁর লোকসান হয়েছে ৬০.০৭ শতাংশ। দরপতনের দ্বিতীয় স্থানে আছে আর্থিক খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি। গত ২১ জানুয়ারি কম্পানিটির প্রারম্ভিক শেয়ারের দর ছিল ৫১.৯ টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে গতকাল ২৫ এপ্রিল কম্পানিটির শেয়ারের দর দাঁড়িয়েছে ২২.৪ টাকা। অর্থাৎ এ সময় কম্পানিটির শেয়ারের দর কমেছে ৫৬.৪৮ শতাংশ বা ২৯.৫ টাকা।
দরপতনের তৃতীয় স্থানে রয়েছে আর্থিক খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান ফিনিক্স ফাইন্যান্স। এই কম্পানির শেয়ারের দর কমেছে ৫৩.৭৪ শতাংশ বা ৭.৯ টাকা। এ ছাড়া রিং সাইন টেক্সটাইল, ডরিন পাওয়ার ও বিডি ফাইন্যান্সের দর কমেছে ৫০ শতাংশের বেশি। গত তিন মাসে ৮৬টি কম্পানি ও ফান্ডের শেয়ারের ৩০ শতাংশের বেশি দর কমেছে। অর্থাৎ ৮৬টি কম্পানিতে যেসব বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের পোর্টফোলিওর ৩০ শতাংশ এখন লোকসান।
এদিকে শেয়ার ও ফান্ডের দরপতনের সীমা ৩ শতাংশ নির্ধারণের পর গতকাল শেয়ারবাজারে বড় পতন হয়েছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া কম্পানি ও ফান্ডগুলোর মধ্যে দর কমেছে ৩০০টির, দর বেড়েছে ৬৯টির এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ২৭টি প্রতিষ্ঠানের। এ সময় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬০.৪৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি সিকিউরিটিজ হাউসের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ‘নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু গ্রামীণ মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান : স্কিম-২-এর ১১ হাজার ২৪৯টি শেয়ারে বিনিয়োগের পর আমার পোর্টফোলিওর ৩৮.৩৭ শতাংশ লোকসান। ২০.৭৭ টাকার প্রতিটি ফান্ড এখন বাজারে ১২.৮০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু মিউচুয়াল ফান্ড নয়, বস্ত্র খাতের এস আদ্যক্ষরের একটি কম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলাম। স্বনামধন্য কম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারে লোকসান ৩১.৪১ শতাংশ। আমার পোর্টফোলিওতে এখন গড় লোকসান ৩০ শতাংশের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগের সাহস পাচ্ছি না এবং পুরনো শেয়ারগুলোও বিক্রি করতে পারছি না।’
অব্যাহত দরপতনের বিষয়ে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি আজাদ আহসান বাচ্চু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একেক দিন একেক নীতি ও সার্কুলার দেওয়ায় মানুষের আস্থা কমে গেছে। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংক বিভিন্ন সিকিউরিটিজ হাউস থেকে ফোর্স সেল দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগ আসছে না।’
এ প্রসঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এম এ হাফিজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আস্থার সংকটে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না শেয়ারবাজার। ক্রমাগত দরপতন হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। বাজারের যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বৈঠক করা উচিত।’
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের সংকট কাটিয়ে উঠতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট কাটিয়ে ওঠাতে হবে। |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|