Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
এক সপ্তাহে টাকা দ্বিগুণের ফাঁদ [ অনলাইন ] 26/04/2024
এক সপ্তাহে টাকা দ্বিগুণের ফাঁদ

জাপানের বিশ্বখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি টয়োটার নাম ভাঙিয়ে আর্থিক প্রতারণায় জড়িয়েছে রয়েল চিটিং ডিপার্টমেন্ট (আরসিডি) নামে একটি চক্রের সদস্যরা। তারা টয়োটা বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের জন্য জমি কিনবে এমন গল্প সাজিয়ে প্রতারণা ফাঁদ পাতে। এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে এক সপ্তাহেই বিনিয়োগকৃত টাকা দ্বিগুণ হওয়ার প্রলোভন দেখানোসহ নানা উপায়ে চক্রটি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি টয়োটার নাম ভাঙিয়ে ফাঁদে ফেলে অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তার ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটির সদস্যরা।

তারা এসবি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খুলে বসে এমন প্রতারণা করছিল। ভুক্তভোগীর অভিযোগ এবং রাজধানীর পল্লবী থানায় করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নিত্যনতুন কৌশলে চক্রটির প্রতারণার সত্যতা পেয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কথিত প্রতিষ্ঠানটি বাড়ির ছাদ ভাড়া নিয়ে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের টাওয়ার স্থাপনের কথা বলে প্রতারণার ফাঁদ পাতত। এসব বলে বাড়ির মালিকদের ডেকে নিয়ে যেত পল্লবীতে এসবি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের অফিসে। ২০২২ সালে তাদের ফাঁদে পড়েন সাভারের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. শাহজাহান। তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন এসবি ইন্টারন্যাশনালের এমডি পরিচয়দানকারী মাসুদুর রহমান, যদিও তার প্রকৃত নাম আবদুল জলিল প্রধান। তিনি মুনাফার লোভ দেখিয়ে শাহজাহানকে একটি জমির বায়নাদার হওয়ার প্রস্তাব দেন। মাসুদুর বলেন, জমিটি টয়োটার পক্ষে মূলত তার বেয়াই কিনবেন, তিনি শুধু মধ্যস্থতা করছেন। বিনিময়ে তাকে ওই কারখানার শেয়ার পাইয়ে দেওয়ার কথা ছিল। তবে বেয়াই সে কথা রাখেননি। তাই তার কাছে ওই জমি বেশি দামে বিক্রি করবেন। বাড়তি টাকা সমানভাবে ভাগ করে নেওয়ার এবং সবকিছু গোপন রাখার শর্তে শাহজাহানও মাসুদুরের প্রস্তাবে রাজি হন।

পিবিআই জানায়, পরে মাসুদুর জমির মালিক হিসেবে মোস্তফাকে (প্রকৃত নাম সনজ সাহা) ডাকেন। মোস্তফা এসে বলেন, তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার। তাই কম দামে জমিটি বিক্রি করছেন। জমির দাম ধরা হয় ২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বায়না করা হয় ২ কোটি টাকায়। তবে বায়না বাবদ জমির মালিককে ৫০ লাখ টাকা পরিশোধের প্রস্তাব দেন মাসুদুর। ওইদিনই জমির ক্রেতা হিসেবে টয়োটার কর্মকর্তা সাজিয়ে মাহবুবুর রহমান নামধারী একজনকে (প্রকৃত নাম মো. মাসুদ খান) অফিসে হাজির করেন মাসুদুর। তাকে মাসুদুর বলেন, জমিটি তিন মাস আগে মোস্তফা বায়না করে দিয়েছেন শাহজাহানের নামে। এখন বেশি দামে কিনতে হবে। প্রস্তাবে রাজি হন মাহবুব। জমির নতুন দাম ধরা হয় ২৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। মাহবুব বায়নাপত্র দলিল দিলে শাহজাহানকে নগদ ৮ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তখন মোস্তফাকে বায়নার ৫০ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন মাসুদুর। তিনি প্রস্তাব দেন, এই টাকা তিনি, তার অফিস স্টাফ জাহাঙ্গীর (প্রকৃত নাম মো. আমিনুর ইসলাম আমিন) ও শাহজাহান মিলে দেবেন। সে অনুযায়ী শাহজাহান ১৫ লাখ টাকা দেন মোস্তফাকে। এরপর টয়োটার কথিত সেই কর্মকর্তা আর আসেন না, অন্যদিকে মাসুদুর এবং তার স্টাফ জাহাঙ্গীরও শাহজাহানকে এড়িয়ে যেতে থাকেন। তখন তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

এ প্রতারণার ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই মো. রবিউল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। তবে সবাই এখন জামিনে মুক্ত। বাকি একজন পলাতক এবং অন্য একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতারকদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করে দুজন ভুক্তভোগীকে দেওয়া হয়েছে।’

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ধরা পড়ার আশঙ্কা দেখলেই প্রতারক চক্রটি এক রাতের মধ্যে অফিস ছেড়ে চলে যেত। সে ক্ষেত্রে ভবনমালিককে ইমোশনালি (মনস্তাত্ত্বিকভাবে) ব্ল্যাকমেইল করত তারা। ভবনমালিককে বলত, তাদের পরিবারের কেউ বিদেশে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সেখানে যেতে হবে। অগ্রিম ভাড়া পরিশোধ করা থাকায় ভবনমালিকও আর বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাতেন না।

ভুক্তভোগী শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি কিছু দুষ্টু লোকের খপ্পরে পড়েছিলাম। তারা আমাকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে একটি জমির বায়নাদার বানিয়ে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছিলাম। তারা (পিবিআই) আমার ১০ লাখ টাকার মতো উদ্ধার করে দিয়েছে।’

পিবিআই জানায়, চক্রের মূল হোতা আবদুল জলিল প্রধান, যিনি এসবি ইন্টারন্যাশনালের এমডি মাসুদুর রহমান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। অন্য একজন সায়মন, যার মাধ্যমে শাহজাহান এ চক্রের খপ্পরে পড়েন, তার আসল নাম-পরিচয় জানতে পারেনি পিবিআই। এর মধ্যে আবদুল জলিল প্রধান, আমিনুর ইসলাম আমিন ও সনজ সাহা গ্রেপ্তার হয়েছিল।

পিবিআইয়ের এসআই মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এ চক্র ঢাকা শহরে অফিস নিয়ে প্রতারণা করে। এক জায়গা থেকে কয়েকটি প্রতারণার কাজ করে সেখান থেকে রাতারাতি চম্পট দেয়। তাদের নামে এমন প্রতারণার আরও বহু মামলা ও অভিযোগ আছে।’

পলাতক সায়মনকে অব্যাহতির বিষয়ে তিনি বলেন, তাকে বহু খুঁজেও পাওয়া যায়নি। তাকে পাওয়া গেলে এ মামলা আবার সচল হবে।

এ প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছিলেন উত্তর বাড্ডার সাঁতারকুল রোডের বাসিন্দা আসবাবপত্র ব্যবসায়ী মো. শাহাদাত হোসেন। তার দোকান থেকে আসবাবপত্র কেনার কথা বলে পল্লবীর অফিসে ডেকে নিয়ে যায় চক্রটি। সেখানে শাহাদাতকে বলা হয়, তাদের কোম্পানির (এসবি ইন্টারন্যাশনাল) ব্যবসা হলো ঘড়ি, চশমা, ক্যামেরা ও কেমিক্যাল আমদানি-রপ্তানি। এ ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে এক সপ্তাহেই বিনিয়োগ করা টাকা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এমন প্রলোভন দেখিয়ে শাহাদাতের কাছ থেকে চক্রটি সাড়ে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পিবিআই তদন্তে এর প্রমাণ পেয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করে ভুক্তভোগীকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে শাহাদাত বলেন, ‘আমার সাড়ে ২৫ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখের মতো পেয়েছি। বাকিটা কবে পাব, জানি না।’

News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• বিল তুলতে জালিয়াতি
• প্রতারণার টাকায় সাততলা বাড়ি
• সরকার কেন হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটকারীদের ধরছে না
• টাকা পাচারের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্য ব্যাংকের অবস্থা খুবই করুণ: অলি
• ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া মানি লন্ডারিং সম্ভব নয়
• কক্সবাজারে মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে এনজিওগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান
• ডাকাত দলের নারী সদস্যসহ গ্রেফতার ১২, অস্ত্র উদ্ধার
• মাদককারবারিসহ তিন জেলায় গ্রেপ্তার ১৪
• ওমরাহ হজে পাঠানোর কথা বলে কোটি টাকা আত্মসাৎ, আটক ২
• নকল ওরস্যালাইনসহ গ্রেপ্তার তিন
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved