[ সারাদেশ ] 14/08/2022 |
|
|
|
দিনে পোশাককর্মী-কাটিং মাস্টার, রাতে ডাকাত |
|
|
দিনের বেলায় তারা কেউ গার্মেন্টকর্মী, গাড়িচালক, হেলপার, রাজমিস্ত্রি, কিংবা কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। কিন্তু রাতের বেলায় তাদের রূপ পাল্টে যায়। হয়ে যান ডাকাত দলের সদস্য। শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার ছয় ব্যক্তির ব্যাপারে এমনটাই জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)- ১১।
শনিবার র্যাব-১১’র অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব-১১ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে সংঘবদ্ধ ওই ডাকাত দলের হোতাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের কবল থেকে দুই ভিকটিম, ডিমবোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বাস, দুটি চাপাতি, একটি চাইনিজ কুড়াল এবং একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন-দলপ্রধান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের আম্বর আলীর ছেলে মূসা আলী, রূপগঞ্জের মো. ফারুকের ছেলে নাঈম মিয়া, নরসিংদীর শিবপুরের চাঁন মিয়ার ছেলে মো. শামীম, একই এলাকার মো. রনি, রূপগঞ্জের মৃত সবুজ আলীর ছেলে আবু সুফিয়ান এবং একই এলাকার বিল্লাল মিয়ার ছেলে মো. মামুন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, শুক্রবার রাতে রূপগঞ্জে এশিয়ান হাইওয়েতে ডিমবোঝাই একপি পিকআপ ভ্যানের গতিবিধি সন্দেহজনক হলে র্যাবের একটি টহল দল সেটির গতিরোধ করে। এ সময় পিকআপ থেকে দুই যুবক নেমে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের আটক করা হয়।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। তারা ডাকাতির উদ্দেশে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস নামের একটি বাসে করে ভুলতা থেকে রূপসী যাওয়ার পথে পিকআপ ভ্যানটির গতিরোধ করে সেটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে পিকআপের চালক ও হেলপারকে মারধর করে হাত-পা বেঁধে তাদের সঙ্গে থাকা বাসে উঠিয়ে নিয়ে বন্দরের মদনপুরের দিকে চলে যায়।
আটক দুই ডাকাতের কাছ থেকে এ তথ্য জানতে পেরে র্যাবের দলটি মদনপুরের গিয়ে ডাকাতদের বাসটি আটক করে। ওই সময় চার জনকে আটক করতে পারলেও আরও ৪-৫ জন পালিয়ে যায়। ডাকাতদের বাস থেকে পিকআপের চালক ও হেলপারকে হাত-পা-মুখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত দলের সদস্যরা জানিয়েছে, তাদের ১০-১২ জনের সংঘবদ্ধ এই দলটি গত কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল।
র্যাব আরও জানায়, দিনের বেলায় তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টকর্মী, কেউ চালক, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রি বা কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও রাতে বিভিন্ন সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে ডাকাতিতে অংশ নেয়।
এই চক্রটি মূলত ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি করে এবং ডাকাতির কাজে একটি বাস ব্যবহার করে। মূসার নির্দেশে প্রথম গ্রুপটি ডাকাতির জন্য বিভিন্ন গার্মেন্টের পণ্যবাহী ট্রাক ও মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ডাকাতির জন্য সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করে।
দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ডাকাতির জন্য টার্গেটকৃত পণ্যবাহী যানবাহনটির পিছু নেয়। পরবর্তীতে সুবিধাজনক স্থানে পণ্যবাহী গাড়িটিকে বাস দিয়ে গতিরোধ করে এবং দ্রুত পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও হেলপারকে এলোপাথাড়ি মারধর করে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে বাসে তুলে নেয়। পরবর্তীতে পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায় এবং তাদের মারধর করে মুক্তিপণ দাবি করে। কিংবা ডাকাতি শেষে পরবর্তীতে তাদের হাত-পা ও চোখ-মুখ বাধাঁ অবস্থায় মহাসড়কের নির্জন স্থানে ফেলে দেয়।
তৃতীয় দলটির নেতৃত্বে থাকা ডাকাত দলের প্রধান মূসা ডাকাতিকৃত পণ্যবাহী গাড়িটি চালিয়ে লুট করা পণ্য বিক্রির জন্য পূর্বনির্ধারিত স্থানে যায় এবং মালামাল আনলোড করে। এ ছাড়াও ডাকাত দলটি পণ্যবাহী গাড়িটি সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করে অথবা ব্যর্থ হলে পরিত্যক্ত অবস্থায় কোনো নির্জন স্থানে ফেলে যায়।
গত ১ বছর ধরে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসটি দিয়ে তারা বেশ কয়েকটি ডাকাতিতে অংশ নেয়। পূর্বে তারা অন্যান্য বাস অথবা পিকআপ দিয়ে ডাকাতি করতো।
মূসা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তিনি এই চক্রের হোতা। গত ১০-১২ বছর ধরে বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছেন তিনি। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা- সিলেট মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা তার নেতৃত্বে হয়েছে এবং প্রত্যেকটিতে তিনি সশরীরে অংশ নেন। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছেন।
গ্রেপ্তার শামীম সর্দার মূসার প্রধান সহযোগী এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসটির চালক। বিগত ২০০৬ সালে স্ত্রী হত্যার দায়ে তিনি ৭ বছর কারাভোগ করেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার রনি ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসটির হেলপার। গ্রেপ্তার নাঈম পেশায় একজন গাড়ি চালক। গ্রেপ্তার মামুন স্থানীয় একটি সেলাই কারখানায় কার্টিং মাস্টারের কাজ করেন।
সম্প্রতি তারা মূসার নির্দেশে বেশকয়েকটি ডাকাতিতে অংশ নেন। তাদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে।
|
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|