Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
উৎসে করে বিদ্যুতের লোকসান ২৪০০ কোটি টাকা [ অনলাইন ] 24/04/2024
উৎসে করে বিদ্যুতের লোকসান ২৪০০ কোটি টাকা
বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত কোনো কোম্পানিকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের অর্থ পরিশোধের সময় প্রদেয় অর্থের ওপর ছয় শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান প্রত্যাহার করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। উৎসে করের জন্য বছরে প্রায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, উৎসে কর থেকে পাওয়া রাজস্বের পরিমাণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডভুক্ত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অতি সামান্য বা দশমিক ৫ শতাংশেরও কম। ফলে এটি প্রত্যাহার করা হলে সরকারের রাজস্ব আয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে না। উৎসে কর প্রত্যাহার করা হলে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ হ্রাস পাবে। ফলে সরকারের ভর্তুকি প্রদানের জন্য ঋণ বা বন্ডের ওপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমানের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, আয়কর আইন অনুযায়ী পিডিবি বা বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত কোনো কোম্পানিকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের অর্থ পরিশোধকালে প্রদেয় অর্থের ওপর ছয় শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বা (বিইআরসি) বা সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো) বাল্ক বিদ্যুৎ বিক্রয় মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের কল্যাণ বিবেচনায় কোনো প্রকার কর ও মুনাফা বিবেচনা করা হয়নি। তাছাড়া, বাবিউবোর ব্যয় বিক্রয় মূল্য দ্বারা নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় প্রতি বছর বাবিউবোর বিপুল পরিমাণ লোকসান হচ্ছে। ছয় শতাংশ উৎসে করের জন্য প্রতি বছর লোকসানের পরিমাণ প্রায় ২০০০ কোটি টাকা থেকে ২৪০০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাবিউবো লোকসানি প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও অপরিচালনা আয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের সুযোগ না থাকায় বিপুল পরিমাণ ছয় শতাংশ উৎসে কর প্রদানের পরও অপরিচালনা খাতের আয়ের জন্য আলাদা কর দাবি করা হচ্ছে। সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর বিদ্যুৎ ট্যারিফের খরচ নির্ধারিত। যার মধ্যে জ্বালানি বিলের পরিমাণ ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ। অবশিষ্ট ২০-৮০ শতাংশ ফিক্সড কস্টের ৭০-৮০ শতাংশ ই-ঋণ ও ঋণের কিস্তি এবং ২০-৩০ শতাংশ হচ্ছে পরিচালনা ব্যয়। ফলে মোট বিলের ওপর ছয় শতাংশ হিসেবে বিপুল পরিমাণ উৎসে কর কর্তন করায় কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য আর্থিক সংকটে ভুগছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল রেখেছে, সেই সঙ্গে বাড়িয়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট, এই চাহিদা বৃদ্ধির হার বছরে ১১ শতাংশ। এ পরিমাণ বিদ্যুতের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থাকে সচল রাখতে একদিকে যেমন বিপুল অর্থের প্রয়োজন, অন্যদিকে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে বিদ্যুতের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারকে বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি প্রদান হয়।

এ বাস্তবতায় যেহেতু বিদ্যুৎ খাত দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, জীবনযাত্রার ব্যয় প্রভৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, সেহেতু বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের যেকোনো পর্যায়ে কোনো ধরনের কর আরোপ করা হলে তা বিদ্যুৎ খাতের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থাসহ দেশের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বাবিউবোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী  কোম্পানিগুলোর মাসিক বিদ্যুৎ বিল থেকে ছয় শতাংশ আয়কর কর্তনের ফলে বার্ষিক করপোরেট কর উৎসে কর আদায়ের চেয়ে অনেক কম হয়। কোম্পানিগুলোর বিল হতে উৎসে কর কর্তনের ফলে কোম্পানিগুলো আর্থিকভাবে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। ছয় শতাংশ উৎসে কর বহাল রাখলে বাবিউবোর সঙ্গে কোম্পানির স্বাক্ষরিত চুক্তি সংশোধন করার প্রয়োজন হবে। চুক্তি সংশোধন করলে ছয় শতাংশ কর বাবিউবোর ওপর বর্তাবে। এর ফলে বাবিউবো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে, যা ভর্তুকির মাধ্যমে পুনর্ভরণ করা প্রয়োজন হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বাবিউবো এবং সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে নির্ধারিত ট্যারিফের ওপর ছয় শতাংশ এবং বিতরণকারী সংস্থা বা কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত বাল্ক ট্যারিফের ওপর অতিরিক্ত ছয় শতাংশ আয়কর ধার্য করা হচ্ছে, যা দ্বৈত করা আরোপ।

বিদ্যুৎ বিল হতে ছয় শতাংশ উৎসে কর কর্তন করা হলে কর-পরবর্তী বছরে প্রদেয় করপোরেট করের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। তবে বিদ্যুৎ বিলের মধ্যে ফুয়েল (এইচএফও, ডিজেল ও গ্যাস) অংশ পিপিএ (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) পাস থ্রু আইটেম হওয়ায় হওয়ায় এর বিপরীতে কর্তনকৃত উৎসে কর পুরোপুরি সমন্বয়ের সুযোগ হচ্ছে না। জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কর্তন করে বিধায় ওই কর উৎসে দুইবার কর্তন হচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য এই ছয় শতাংশ কর সংস্থান না থাকায় কোম্পানিগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি হ্রাসে সরকার ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। উৎসে কর বিদ্যুতের মূল্যের শতাংশ হারে হওয়ায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উৎসে করের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা নির্বাহ করা বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য দুরূহ হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় উল্লিখিত ছয় শতাংশ উৎসে কর কর্তনের অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন।

News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• গ্যাস উৎপাদন: কূপ খননে আরও চড়া দাম চায় গাজপ্রম
• অভিযানে ক্লান্ত কোম্পানিগুলো আবাসিকে গ্যাস দিতে চায়
• অদক্ষ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে দ্বিগুণ ব্যয়ে চলছে উৎপাদন!
• আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ত্রুটি, স্বাভাবিক হয়নি সিলেটের বিদ্যুৎব্যবস্থা
• বারবার বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, চাপে ভোক্তা
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved